বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটারের বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা ধরে আটকা পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
গজারিয়ায় শ্রমিকদের অবরোধের কারণে এই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।
সকাল ৮টার দিকে কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েন।
গজারিয়া থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত এই যানজটের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে আসা হাসান শাহরিয়ার চৌধুরী নামে এক যাত্রী ইউএনবির কাছে তার দুর্দশার কথা বর্ণনা করেছেন।
শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ৬ টায় যাত্রা শুরু করি এবং দাউদকান্দি সেতু পার হওয়ার পর বিশাল যানজটের কারণে আটকে যাই। ঠিক কী কারণে এটা ঘটেছে, তা আমি জানি না, তবে এটি ভয়াবহ।’
তার কাজের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, এবং ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক একটি বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'ঢাকায় আসা-যাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এই বিরক্তিকর ট্রাফিক জ্যামের কারণে আজ আমার দীর্ঘ চার ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। শুধু আমি নই, শত শত বাসের হাজার হাজার যাত্রী মহাসড়কের দুই প্রান্তে আটকা পড়েন।’
এই ভোগান্তির সময় হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে বা আটকে পড়া যাত্রীদের সহায়তার জন্য পুলিশের কোনো উপস্থিতি ছিল না।’
বাংলাদেশের দুটি প্রধান শহরকে যুক্ত করা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘন ঘন যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
এমনকি ছোটখাটো দুর্ঘটনা বা নানা কারণে অবরোধে প্রায়ই গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়। যেকোনো ছুটি বা উৎসবের সময় ভ্রমণে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় যাত্রীদের। যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় উন্নত মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়ে আসছেন।
কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ
গজারিয়ার আনারপুরায় জেএমআই গ্রুপ নামে একটি মেডিক্যাল ডিভাইস তৈরির কারখানার ২০০-২৫০ জন কর্মী এই অবরোধে অংশ নেন বলে জানা গেছে।
ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াদুল ইসলাম জানান, গত ১০ অক্টোবর সহকর্মীর মৃত্যুর পর শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে এসে বিক্ষোভে করেন।
জানা গেছে, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জেএমআই কারখানার ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এরপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মৃতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে বলে এসআই রিয়াদুল নিশ্চিত করেন।
তবে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও, শাহরিয়ারের মতো যাত্রীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে ধীর গতি এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে অবহেলা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রধান সড়ক থেকে ছোট যানবাহন অপসারণের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াতের জন্য অপরিহার্য এই মহাসড়কে অব্যাহত যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাঘাত ঘটছে এবং যাতায়াতকারীরা প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে হাজার হাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত, শ্রমিকদের বিক্ষোভ বা দীর্ঘ ট্র্যাফিক জ্যাম সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা আগামীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্বিঘ্নে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
কারখানার শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তাদের কারখানাই দেশের একমাত্র মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী কারখানা এবং পুরোপুরি রপ্তানিমুখী।
তিনি বলেন, তার শিল্প গ্রুপের কর্মচারীরা শ্রম আইনে বিদ্যমান সুবিধার চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) মুহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবরোধের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।’
হাইওয়ে পুলিশ সম্পর্কে তিনি বলেন, জনসাধারণের স্বার্থে আইন প্রয়োগ এবং নিয়ম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তারা দায়বদ্ধ।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ